বঙ্গদেশে যেসব এলাকা প্রাচীন কালের সভ্যতার বিকাশ লাভ করেছিলো তার মধ্যে কুমিল্লার ময়নামতি অন্যতম। এখানে আবিষ্কার হয়েছিলো হাত কুড়াল, বাটালি ইত্যাদি। এগুলো থেকে অনুমান করা হয় খ্রিষ্ট পূর্ব প্রায় ৩০০০ অব্দের আগে এই এলাকায় বসতি গড়ে উঠেছিলো।
ময়নামতির পাহাড়ি এলাকাটি উত্তর দক্ষিণ এ লম্বায় ১৭ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ৪.৫ কিলোমিটার। এর উত্তর প্রান্তে রানী ময়নামতির পাহাড় এবং দক্ষিণ প্রান্তে লালমাই পাহাড় রয়েছে।ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে জানা যায় ময়নামতি লালমাই পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাচীন নাম ছিলো দেবপর্বত।এর পশ্চিমে একটি “খিরুদা” নামক নদী ছিলো।
সেই সমতল শাসন আমলের রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে সফল রাজা ছিলো দশম শতাব্দীর চন্দ্রবংশীয় রাজা মানিকচন্দ্র।ময়নামতি ছিল চন্দ্রবংশের মানিকচাঁদ এর স্ত্রী। ময়নামতি ছোটবেলা থেকেই যেমন ছিলো রুপবতী তেমনই ছিলো গুনবতী।ময়নামতি তার গুরুর কাছ থেকে জ্যোতিষবিদ্যা ও যোগ্য সাধনা শিখে মানুষের ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা লাভ করেছিলো।
একদিন ইচ্ছে হলো তার নিজের ভবিষ্যৎ দেখার। গননা করে নিজের জীবনে দেখলো ভীষণ অমঙ্গলের একটি চিহ্ন। সে পূত্র সন্তান লাভ করবে কিন্তু ১৮ বছরেই সন্তান টি মারা যাবে।
ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়লো সে। ছেলেকে বাঁচাতে আবার সাধনা করে দেবতাকে তুষ্ট করে ছেলেকে বাঁচাতে সক্ষম হলো সে।কিন্তু দেবতার শর্ত ছিলো ১৮ বছর হলেই ছেলেকে সবকিছু ত্যাগ করে সন্যাসী হতে হবে।যথাসময়ে রানীর পূত্র হলো রাজা মানিকচন্দ্র ও খুশি অনেক।
অনেক শখ করে ছেলের নাম রাখে গোপিচাঁদ। গোপি একটু বড় হতেই ধুমধাম করে গোপির বিয়ে দেয় রাজা হরিচন্দ্রের ২ মেয়ের সাথে। গোপির বয়স ১৮ হওয়ায় মময়নামতি গোপিকে বনে যাওয়ার আদেশ দেন। মায়ের আদেশে গোপি রাজি হলেও গোপির স্ত্রী রা রাজি হয়নি।তারা রানী কে গালমন্দ করে অনেক।
মানিকচন্দ্র রানীর সত্যতা যাচাই করতে ফুটন্ত পানিতে নিক্ষেপ করে তখন রানী সুস্থভাবে ফিরে আসায় সবাই ভুল বুঝতে পেরে রানীর কাছে ক্ষমা চায়।
এরপরে গোপি বনে যায় কয়েকবছর পর ফিরে আসায় আবার সবাই হাসিখুশি ভাবে থাকে। দশম শতাব্দী তে রানী ময়নামতির নামানুসারে এই স্থানটির নাম রাখা হয়েছিলো “ময়নামতি”।
১৩ শতকের শেষ দিকে বঙ্গের সমতর ও হরিকেল জনপদের সাথে এই অঞ্চল ও মুসলিম শাসকদের অধীনে আসে। পরের শতকগুলোতে ওই অঞ্চল ত্রিপুরার রাজারা শাসন করেন।
কলমকথা/বি সুলতানা
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।